করোনার মহামারি কাটিয়ে যেমন ভ্যাকসিন উৎসবে মেতেছে দেশ, তেমনি উৎসবমুখর হচ্ছে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। সরকারি সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে ২১ ফেব্রæয়ারির ছুটিসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে লাখো পর্যটক ভিড় জমিয়েছেন দেশের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। সমুদ্র সৈকতে বন্ধু, পরিবার, স্বজনকে নিয়ে ভ্রমণ আনন্দে মেতেছে ভ্রমণপিপাসুরা মানুষ। সেন্টমার্টিনসহ পুরো কক্সবাজারে এখন পর্যটক আর পর্যটক। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই বললেই চলে। বালুকাময় সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা, বালুতে ছুটোছুটি আর সাগরের উন্মাতাল ঢেউকে আগলে নোনাজলে স্নানের অনাবিল আনন্দ যেন বারবার কাছে টানে বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন দিনের ছুটির প্রথম দিনে অন্তত চার লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন। এখানকার চারশ হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসসহ কটেজের কোথাও কোনো কক্ষ ফাঁকা নেই। এ চাপ থাকবে রোববার পর্যন্ত। একাধিক হোটেল-মোটেল সূত্র জানায়, এবারের একুশে ফেব্রæয়ারি উপলক্ষে সরকারি ছুটি রোববার হওয়ায় এবং সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার মিলে টানা তিন দিনের ছুটি পাওয়ায় ভ্রমণপ্রেমীরা ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে।
ঢাকা থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা কলেজছাত্রী তানিয়া বললেন, করোনার কারণে এতদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। এখন কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। অসাধারণ ভালো লাগছে। তবে বিচের আশপাশের পরিবেশ আরও ভালো হওয়া দরকার বলে জানান তিনি।
এদিকে পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলসহ খাবার রেস্টুরেন্টগুলো। এখানকার চারশ হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসের কোনোটিতেই ২১ ফেব্রæয়ারি এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৬
ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতে ঢল
পর্যন্ত রুম ফাঁকা নেই বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, মহান ২১ ফেব্রæয়ারিসহ টানা তিন দিনের ছুটি। সব মিলিয়ে মোটামুটিভাবে বৃহস্পতিবারে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার।
কক্সবাজার স্যুইট সাদাফের জেনারেল ম্যানেজার শহিদুল মাওলা জীবন বলেন, মহামারি করোনায় পর্যটন শিল্পে একটু নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু গত দুদিনে প্রচুর পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন। হোটেল-মোটেলের প্রায় সব কক্ষ অনেক আগেই বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের বাড়তি সেবা দিতে এসব হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার সিটি কলেজের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মঈনুল হাসান চৌধুরী পলাশ বলেন, সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার অনাবিল সুখ এবং পাহাড়-সমুদ্রের মেলবন্ধনের অপূর্ব দৃশ্য। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, রামুর বৌদ্ধ বিহার, হিমছড়ির ঝরনা, ইনানীর পাথুরে সৈকতসহ এখানে দেখার আছে অনেক কিছু। তবে এগুলোর পাশাপাশি আমাদের পর্যটকরা যাতে রাতে নিরাপদ সময় কাটাতে পারেন এমন কিছু বিকল্প ব্যবস্থা করা দরকার। এসব বিষয়ে সরকারকে আরও নজর দিতে হবে কক্সবাজারে।
সৈকতের পাশাপাশি কক্সবাজারের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের ঝাউতলায় বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিস ওর্য়াল্ডেও এমনই দৃশ্য দেখা যায়। রয়েছে টিকেট কাউন্টারের সামনে পর্যটকদের দীর্ঘ সারি। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মো. ফারুক জানান, গত দুদিন ধরে প্রচুর পর্যটক এখানে আসছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকের ভিড় থাকে এখানে। আন্তজার্তিক মানের এই ফিস অ্যাকুরিয়াম দেখে পর্যটকরা বেশ খুশি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের গবেষণা বলছে, সাগরে মোট ৪৫০ প্রজাতির মাছ আছে। সেখান থেকে আমরা ১৭০ প্রজাতির মাছ এই অ্যাকুরিয়ামে রাখতে সক্ষম হয়েছি। পর্যটকেরাও ইতোমধ্যে জেনে গেছে, এখানে এলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ সমুদ্রের তলদেশের বিরল জীববৈচিত্র্য দেখতে পাবে। তাই প্রচুর পর্যটক এখন এখানে আসছে।